প্রতিবেদন: সৈকত দাস, বালি:
১লা জুলাই, জাতীয় ডাক্তার দিবস—যা বিশিষ্ট চিকিৎসক ও স্বাধীন ভারতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যপাল ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের জন্মদিন হিসেবে সারা দেশে পালন করা হয়—সেই বিশেষ দিনটি উপলক্ষে হাওড়ার বালি অঞ্চলে আয়োজিত হল এক বিশেষ মানবিক উদ্যোগ।
এদিন বালির বিধায়ক তথা পেশায় চিকিৎসক ডাঃ রানা চ্যাটার্জি ও তাঁর সহধর্মিণী ডাঃ রিতুপর্ণা চ্যাটার্জির নেতৃত্বে এবং বেলুড় মৈত্রী সংঘ ক্লাবের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হয় একটি বিনামূল্যে স্বাস্থ্য শিবির ও চক্ষু পরীক্ষা ক্যাম্প।
এই স্বাস্থ্য শিবিরে প্রায় ৮০০ জনের বেশি স্থানীয় বাসিন্দা অংশগ্রহণ করেন। তাঁদের জন্য বিনামূল্যে চক্ষু পরীক্ষা, ছানি নির্ণয় ও অপারেশনের ব্যবস্থা, ব্লাড সুগার চেক-আপ, ইসিজি পরীক্ষাসহ অন্যান্য সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও পরামর্শ পরিষেবা প্রদান করা হয়। দক্ষ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের তত্ত্বাবধানে প্রতিটি রোগীর সঠিক রোগ নির্ণয় ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিশ্চিত করা হয়।
ডাঃ রানা চ্যাটার্জি বলেন,
“ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের মতো একজন মহান চিকিৎসকের জন্মদিনে, ‘সেবাই ধর্ম’ এই মূলমন্ত্রকে সামনে রেখে আমরা এই স্বাস্থ্য শিবিরের আয়োজন করেছি। স্বাস্থ্যসেবা শুধু হাসপাতালের গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য।”
এদিনের এই কর্মসূচিতে স্থানীয় মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি ও অংশগ্রহণ শিবিরটিকে সার্থক করে তোলে। বহু মানুষ তাঁদের অভিজ্ঞতা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে জানান, এমন পরিষেবা তাঁদের কাছে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, বিশেষ করে যাঁরা নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষার সুযোগ পান না।
এই ধরণের সমাজসেবামূলক উদ্যোগ বারবার প্রমাণ করে দেয়, চিকিৎসা কেবলমাত্র একটি পেশা নয়—এটি এক মহান দায়িত্ব এবং মানুষের প্রতি কর্তব্য। জাতীয় ডাক্তার দিবসে এমন একটি প্রকল্প আয়োজন করে বালি শহর এক অনন্য নজির গড়লো।
বিশিষ্ট চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাঃ রিতুপর্ণা চ্যাটার্জি এই প্রসঙ্গে বলেন,
“চোখ মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান অঙ্গগুলোর একটি। কিন্তু অনেক মানুষ আর্থিক অক্ষমতার কারণে নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষা করাতে পারেন না। তাই জাতীয় ডাক্তার দিবসের মতো একটি বিশেষ দিনে এমন একটি চক্ষু পরীক্ষা শিবিরের আয়োজন করতে পেরে আমি গর্বিত ও আনন্দিত।”
তিনি আরও বলেন,
“আজকের দিনে শুধু ছানি শনাক্তকরণ নয়, অনেক রোগীর চোখের অন্যান্য সমস্যাও ধরা পড়েছে। আমরা চেষ্টা করেছি প্রত্যেককে যথাযথ পরামর্শ ও প্রয়োজন অনুযায়ী পরবর্তী চিকিৎসার ব্যবস্থা দিতে। আগামী দিনে আরও বড় পরিসরে এই ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে চাই আমরা।”
ডাঃ রিতুপর্ণা চ্যাটার্জির এই মানবিক বার্তা ও উদ্যোগ মানুষকে যেমন স্বাস্থ্য সচেতন করে তুলেছে, তেমনি চিকিৎসকদের সমাজে দায়বদ্ধ ভূমিকার কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।
মানবিক মূল্যবোধ, সামাজিক দায়িত্ব ও নাগরিকদের স্বাস্থ্য সচেতনতায় উৎসাহ জোগাতে এমন উদ্যোগ ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে আশা সকলের।