কলকাতা: গতকাল রাত প্রায় ১০টা ৩০ মিনিট নাগাদ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ নম্বর গেট সংলগ্ন ঝিলপাড়ে এক ছাত্রীর নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রাতের অন্ধকারে প্রথমে তাঁকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে উদ্ধার করে নিকটবর্তী একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, মৃতার নাম অনামিকা মণ্ডল (২০)। তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার বেলঘড়িয়া নিমতা এলাকায়। হঠাৎ এভাবে ছাত্রীটির মৃত্যুতে তাঁর পরিবার এবং সহপাঠীদের মধ্যে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
রহস্যজনক মৃত্যু ঘিরে ধোঁয়াশা:
ছাত্রীর মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট নয়। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। কীভাবে অনামিকা ঝিলে পড়লেন, মৃত্যুর নেপথ্যে কোনও দুর্ঘটনা নাকি অন্য কোনও কারণ রয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে ছাত্রীর ফোন ও ব্যক্তিগত তথ্য খতিয়ে দেখছে পুলিশ। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ছাত্রছাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদও শুরু হয়েছে।
রাজনীতির আঁচ:
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে। শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে অভিযোগ তোলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে সিসি ক্যামেরা পর্যাপ্ত থাকলে এ ধরনের ঘটনা ঘটত না। তাঁদের আরও দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর মনোনীত উপাচার্য নিয়োগ না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ফাঁকফোকর তৈরি হয়েছে। তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, অবিলম্বে সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপন ও নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে।
শোক ও ক্ষোভের পরিবেশ:
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এই ঘটনাকে ঘিরে তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সহপাঠীরা প্রশ্ন তুলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ এতটাই নিরাপত্তাহীন কেন? রাতের বেলা প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় বারবার ঘটছে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি। অনামিকার মৃত্যুর পর ক্যাম্পাসে শোকের আবহের পাশাপাশি ক্ষোভও দেখা দিয়েছে।
মৃতার পরিবার ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানিয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় এভাবে এক তরুণীর মৃত্যু কোনওভাবেই স্বাভাবিক নয়। পরিবারের সদস্যদের চোখে এখন শুধু একটাই প্রশ্ন—“আমাদের মেয়ের সঙ্গে আসলে কী ঘটেছিল?”
কলকাতা পুলিশের তদন্তের ফলাফলের দিকে তাকিয়ে রয়েছে সমগ্র রাজ্য। অনামিকা মণ্ডলের অকাল মৃত্যু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক শৃঙ্খলা নিয়ে ফের বড় প্রশ্ন তুলে দিল।