সৈকত দাস,(উত্তরপাড়া): উত্তরপাড়া ইয়ুথ কর্নার ক্লাব, যাত্রা শুরু করে ১৯৪৭ সালে—দেশভাগের এক অস্থির সময়ে। ঠিক সেই সময় যখন দেশ স্বাধীনতা পেলেও সমাজজুড়ে অনিশ্চয়তা, উদ্বেগ এবং পুনর্গঠনের প্রয়োজন ছিল প্রবল। এই ক্লাবের জন্ম সেই ইতিহাসের প্রেক্ষাপটেই, একটি শক্তিশালী সামাজিক সংগঠন হিসেবে, যা কেবল সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি বরং সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
নববর্ষ, বাঙালির জীবনে এক বিশেষ দিন। এই দিনটি উত্তরপাড়া ইয়ুথ কর্নার ক্লাব পালন করে সম্পূর্ণ ধর্মীয় ও মানবিক আবহে। ২০১৪ সালের ১৫ই এপ্রিল, পয়লা বৈশাখের দিনেই, ক্লাবের সামনে প্রতিষ্ঠা করা হয় বজরংবলির একটি মন্দির। মানুষের বিশ্বাস, ভক্তি ও নিরন্তর সেবার প্রতি ক্লাবের অঙ্গীকারের প্রতীক এই মন্দির। সেই থেকে প্রতি বছর এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে ক্লাব আয়োজন করে মহাবীরের প্রসাদ বিতরণ। এই প্রথা শুধু ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়, এক ধরনের নরনারায়ণ সেবা—যেখানে মানুষের মধ্যে ঈশ্বরকে অনুভব করার আহ্বান জানানো হয়।
ক্লাবের উদ্যোগ এখানেই থেমে থাকে না। বছরের বিভিন্ন সময় তারা স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবিরের আয়োজন করে, যেখানে বহু মানুষ বিনামূল্যে স্বাস্থ্যপরীক্ষা ও পরামর্শ পান। পাশাপাশি রক্তদান শিবিরের মাধ্যমে তারা জীবন বাঁচানোর এক মহান ব্রত গ্রহণ করে। শিশুদের মধ্যে সৃজনশীলতা জাগিয়ে তুলতে অঙ্কন প্রতিযোগিতার মতো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় নিয়মিতভাবে।
ধর্মীয় অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রেও ক্লাব খুবই সক্রিয়। অত্যন্ত আড়ম্বর ও ভক্তিভরে উদযাপন করা হয় দু
র্গা পূজা, কালি পূজা সহ নানা বার্ষিক পূজা-পার্বণ। এইসব আয়োজনের মাধ্যমে উত্তরপাড়ার মানুষদের মধ্যে ধর্মীয় সংহতি ও সামাজিক বন্ধন দৃঢ়তর হয়।
এছাড়া ক্লাবের সবচেয়ে প্রশংসনীয় দিক হল অনাথ ও দুস্থ শিশুদের প্রতি তাদের বিশেষ দৃষ্টি। বছরে একাধিকবার তারা খাদ্য ও বস্ত্র বিতরণের আয়োজন করে, যাতে এই অসহায় শিশুরা সাময়িক হলেও কিছু স্বস্তি পায়, হাসে—যা সমাজের প্রতি এক মূল্যবান অবদান।
এইভাবে উত্তরপাড়া ইয়ুথ কর্নার ক্লাব একটি ক্লাবের সীমানা ছাড়িয়ে এক সামাজিক আন্দোলনে পরিণত হয়েছে—যেখানে ঐতিহ্য, ধর্মীয় আস্থা এবং মানবিক মূল্যবোধ একসাথে মিলে তৈরি করেছে একটি প্রেরণাদায়ক মডেল।