দেশবাঙালির পুজোব্যবসা ও বাণিজ্যভক্তিমূলকযাত্রী পরিবহন বিষয়করাজনৈতিকরাজ্যসাহিত্যের পাতা

দীঘার বুকে নতুন ইতিহাস: অক্ষয় তৃতীয়ায় মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে জগন্নাথ মন্দিরের দ্বারোন্মোচন

সৈকত দাস,দীঘা, ২৯ এপ্রিল : পুরির ছোঁয়ায় দীঘায় নতুন আধ্যাত্মিক ঠিকানা, পর্যটনের ক্ষেত্রে খুলছে সম্ভাবনার নতুন দ্বার।

সমুদ্র শহর দীঘা এবার কেবল রৌদ্র-সমুদ্রের শহর নয়, আধ্যাত্মিকতার এক নতুন কেন্দ্র হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে। বহু প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে, অক্ষয় তৃতীয়ার শুভদিনে উদ্বোধন হতে চলেছে দীঘার নবনির্মিত জগন্নাথ মন্দির। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে বুধবার সকালে সম্পন্ন হবে মন্দিরের আনুষ্ঠানিক দ্বারোন্মোচন।

পুরির ছায়া এবার দীঘায়,দীঘার এই নতুন জগন্নাথ মন্দিরের আদল পুরির বিখ্যাত শ্রীজগন্নাথ মন্দিরের ধাঁচে তৈরি হয়েছে। পুরি থেকে বিশেষভাবে আনা হয়েছে প্রশিক্ষিত পুরোহিতদল, যারা মন্দিরের নিয়মিত পূজা-আর্চনা ও আচার-অনুষ্ঠান পরিচালনা করবেন। মন্দিরের স্থাপত্যে ফুটে উঠেছে ওড়িশার প্রাচীন মন্দির নির্মাণশৈলীর অনুপ্রেরণা, যা দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করবে।

মুখ্যমন্ত্রীর সরেজমিন পরিদর্শন

সোমবার সকালে দীঘায় পৌঁছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি নতুন মন্দির চত্বরে যান। সেখানে তিনি নির্মাণ কাজের অগ্রগতি ঘুরে দেখেন এবং মন্দির কর্তৃপক্ষ ও পুরোহিতদের সঙ্গে বৈঠক করেন। স্থানীয় প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনায় তিনি মন্দির সংলগ্ন পরিকাঠামো উন্নয়ন, পর্যটকদের নিরাপত্তা এবং যানবাহন চলাচলের বিষয়ে নানা দিকনির্দেশ দেন।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন,

“দীঘার এই মন্দির কেবল ধর্মীয় তীর্থস্থান নয়, পর্যটনেরও এক নতুন মাইলস্টোন হবে। আমরা চাই, দীঘা হোক বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র।”

বুধবার ভোর থেকেই শুরু হবে বিশেষ পূজা ও হোম-যজ্ঞ। এরপর মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে হবে দ্বারোন্মোচন। উদ্বোধন উপলক্ষে বিশাল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আমন্ত্রিত অতিথিদের তালিকায় রয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী, জনপ্রতিনিধি, উচ্চপদস্থ প্রশাসনিক কর্তারা ও বিশিষ্ট নাগরিকরা।

মন্দির কমিটির এক সদস্য জানিয়েছেন,

“মন্দিরের মূল উদ্দেশ্য শুধু ধর্মীয় নয়, দীঘার পর্যটন মানচিত্রকে আন্তর্জাতিক স্তরে তুলে ধরা। ভবিষ্যতে এখানে রথযাত্রা উৎসবও আয়োজন করার পরিকল্পনা রয়েছে।”

সাজো সাজো রব মন্দির চত্বরে

বর্তমানে মন্দির চত্বরে সাজো সাজো রব। চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, রঙ-রোগান, আলোকসজ্জা থেকে শুরু করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যন্ত সবদিকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মন্দির চত্বরজুড়ে ইতিমধ্যেই বাঁশের ব্যারিকেড বসানো হয়েছে, দর্শনার্থীদের সুষ্ঠুভাবে প্রবেশ ও বেরোনোর সুবিধার জন্য।

বিশেষ অংশ:

টাইমলাইন: মন্দির উদ্বোধনের দিন ( ৩০শে এপ্রিল, বুধবার)

সময় অনুষ্ঠান

ভোর ৫টা বিশেষ মঙ্গল আরতি

সকাল ৬টা হোম-যজ্ঞ ও পুরোহিতদের দ্বারা বিশেষ পূজা

সকাল ৮টা মুখ্যমন্ত্রী মন্দিরে উপস্থিতি ও পরিদর্শন

দুপুর ১২টা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু

সকাল ৩টা মন্দির দ্বারোন্মোচন ও মহাপ্রসাদ বিতরণ

বিকেল ৫টা সমাপ্তি অনুষ্ঠান ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন

মন্দিরের মানচিত্র (বর্ণনামূলক)

মূল মন্দির গর্ভগৃহ: ভেতরে শ্রীজগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রার বিগ্রহ স্থাপন করা হয়েছে।

 

প্রবেশপথ: বিশাল সিঁড়ির মাধ্যমে পৌঁছনো যাবে, চারিদিকে বাগান ও বিশ্রামের জায়গা।

 

প্রসাদ বিতরণ কেন্দ্র: মন্দিরের পাশে পৃথক ভবনে প্রসাদ বিতরণের ব্যবস্থা।

 

বিশেষ দর্শন করিডর: বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী দর্শনার্থীদের জন্য আলাদা করিডর।

 

নিরাপত্তা কেন্দ্র: পুলিশের সহায়তা কেন্দ্র এবং পর্যটক তথ্যকেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে মন্দিরের প্রবেশপথের কাছে।

পর্যটন শিল্পের নতুন দিগন্ত

স্থানীয় ব্যবসায়ী সংগঠনের মতে, এই মন্দির উদ্বোধনের ফলে দীঘায় পর্যটকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে। ইতিমধ্যেই হোটেল মালিকেরা বিশেষ ছাড়ের প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। দীঘার এক হোটেল মালিক বলেন,

 

“মন্দির উদ্বোধনের খবর শুনেই বুকিং বেড়ে গেছে। আগামী তিন মাসের জন্য দীঘায় পর্যটনের নতুন জোয়ার আসবে।”

সংক্ষেপে বিশেষ আকর্ষণ

বিশেষ মন্দির দর্শন পাস: উদ্বোধনের দিন নির্দিষ্ট পাসের মাধ্যমে দর্শন।

 

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান: রাজ্যের বিখ্যাত শিল্পীদের পরিবেশনা।

 

বিশেষ আলোকসজ্জা: রাতে মন্দির চত্বরে থাকবে আলোকমালার ঝলকানি।

 

বিশেষ তথ্য:

উদ্বোধন দিবস :             ৩০ শেষ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার (অক্ষয় তৃতীয়া)

মন্দিরের উচ্চতা প্রায় :     ৭২ ফুট

নির্মাণ সময় :                 ২ বছর

খরচ আনুমানিক :           ৭০ কোটি টাকা

মন্দিরের নকশা :             পুরির শ্রীজগন্নাথ মন্দিরের আদলে

বিগ্রহ শ্রীজগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রা

প্রধান পুরোহিত :             পুরি থেকে আনা প্রথাগত সেবায়েত

দর্শনার্থী ধারণ ক্ষমতা :      এক সঙ্গে প্রায় ১০,০০০ দর্শনার্থী

নিরাপত্তা ব্যবস্থা :             ২৪ ঘণ্টা CCTV, পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন

পরিবহন সুবিধা :              বিশেষ বাস সার্ভিস, ট্যাক্সি স্ট্যান্ড

মহাপ্রসাদ বিতরণ:            আগত দর্শনার্থীদের জন্য থাকবে বৃহৎ প্রসাদ বিতরণের ব্যবস্থা।

 

 

দীঘার রূপ বদলাচ্ছে। এবার রূপের সঙ্গে যোগ হচ্ছে ধর্মের ছোঁয়া। দীঘার নতুন জগন্নাথ মন্দির শুধু রাজ্যের গর্বই নয়, ভারতের পর্যটন মানচিত্রে এক নতুন মাইলফলক হয়ে উঠবে — এমনটাই আশা করছেন সকলে।

 

Related Posts

Leave A Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *