সৈকত দাস, (কলকাতা, ১৭ এপ্রিল) :
সারা ভারত ফরোয়ার্ড ব্লক-এর পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার কলকাতার মহাজাতি সদন সংলগ্ন মেট্রো স্টেশনের কাছে এক সচেতনতা মূলক ও প্রতিবাদমূলক পথসভার আয়োজন করা হয়। সভার সূচনায় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মূর্তিতে মাল্যদান করে তাঁর আদর্শ ও সংগ্রামের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলীয় নেতৃবৃন্দ। নেতাজির আত্মত্যাগ ও দেশপ্রেমকে স্মরণ করে তাঁরা সভায় উপস্থিত জনসাধারণের মধ্যে দেশপ্রেমের বার্তা ছড়িয়ে দেন।
এই পথসভা মূলত কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক প্রস্তাবিত ওয়াকাফ সংক্রান্ত বিলের প্রেক্ষিতে সংগঠনের মতামত, আশঙ্কা ও প্রতিবাদ প্রকাশের উদ্দেশ্যে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জানানো হয়, এই বিলের মাধ্যমে দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্পত্তির উপর একপ্রকার দখলদারি প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চলছে, যা সংবিধান ও ধর্মনিরপেক্ষতার পরিপন্থী।
পথসভায় মুখ্য বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অল ইন্ডিয়া ফরোয়ার্ড ব্লক-এর সাধারণ সম্পাদক জি. দেবরঞ্জন। তিনি ওয়াকাফ বিলের সম্ভাব্য প্রভাব বিশ্লেষণ করে বলেন, “এই বিল শুধু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সম্পত্তির উপর হস্তক্ষেপ নয়, এটি একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক কৌশলের অংশ, যার লক্ষ্য জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ করা।” তিনি কেন্দ্রের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-এর নীতির তীব্র সমালোচনা করেন এবং উভয় পক্ষের রাজনৈতিক দৌরাত্ম্য ও জনবিচ্ছিন্ন নীতিকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করান।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন অল ইন্ডিয়া ফরোয়ার্ড ব্লক-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট গনেশ রানা, যিনি বলেন, “এই বিলের মাধ্যমে সরকার জনগণের স্বার্থ রক্ষার পরিবর্তে কর্পোরেট ও মৌলবাদী শক্তির স্বার্থ রক্ষা করছে।”
বামফ্রন্টের জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি অঞ্চলের প্রাক্তন বিধায়ক জীবন সাহা বলেন, “জনগণের ঐক্য ও প্রতিরোধই পারে এই ধরনের স্বৈরাচারী বিল রুখে দিতে।”
এছাড়াও বক্তব্য রাখেন অল ইন্ডিয়া ফরোয়ার্ড ব্লক-এর জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি ও বড়বাজার এলাকার সম্পাদক মুক্তার আলম, যিনি সাধারণ মানুষের মধ্যে এই বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির গুরুত্ব তুলে ধরেন।
সভার সমাপ্তিতে উপস্থিত বক্তারা জনসাধারণকে আহ্বান জানান, তাঁরা যেন এই ধরনের জনবিরোধী বিলের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ গড়ে তোলেন এবং আগামী দিনে বৃহত্তর আন্দোলনের অংশ হন।
এই সভা রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বর্তমান সামাজিক ও ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রশ্নে এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করল।
পথসভায় বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষ, কর্মী ও সমর্থকের উপস্থিতি প্রমাণ করে দিল যে, এই প্রশ্নে সমাজে প্রবল অসন্তোষ তৈরি হয়েছে এবং মানুষের মধ্যে পরিবর্তনের দাবি ক্রমেই জোরদার হচ্ছে।