সৈকত দাস, কলকাতা, ১৭ এপ্রিল ২০২৫:
রাজ্য রাজনীতির পরিচিত মুখ, বিজেপি-র জাতীয় সহ-সভাপতি ও প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ জীবনের এক নতুন অধ্যায়ে পা রাখলেন। ৬১ বছর বয়সে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন ৫১ বছর বয়সী বিজেপির মহিলা মোর্চার কর্মী র্রিঙ্কু মজুমদারের সঙ্গে। রিঙ্কু একজন বিবাহ বিচ্ছিন্না, এবং দীর্ঘদিনের পরিচয় থেকে তৈরি এই সম্পর্ককে সামাজিক ও আইনি স্বীকৃতি দিয়ে তাঁদের বিবাহ অনুষ্ঠিত হয় কলকাতাতেই এক ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানে।
দীর্ঘদিন আরএসএস-এর একনিষ্ঠ প্রচারক হিসেবে ব্রহ্মচর্য মেনে জীবন কাটিয়েছেন দিলীপ ঘোষ। ব্যক্তিগত জীবনকে অনেকটাই পিছনে রেখে তিনি দেশের সেবায় ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন। তাঁর এই দাম্পত্য জীবনে প্রবেশ অনেকের কাছেই ছিল চমকপ্রদ, তবে বিজেপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক মহলের তরফে তাঁকে অভিনন্দনের বন্যায় ভাসানো হয়েছে।
রাজনীতিকদের উপস্থিতিতে জমজমাট বিয়ে
বিয়ের অনুষ্ঠানে বিজেপি রাজ্য নেতৃত্বের এক বিশিষ্ট উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। উপস্থিত ছিলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, সাংসদ লকেট চ্যাটার্জি, সুনিল বানসাল, মঙ্গল পাণ্ডে, অমিতাভ চক্রবর্তী, সতীশ দোহন এবং জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো। সবাই নবদম্পতিকে শুভেচ্ছা ও আশীর্বাদ জানান।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও এই শুভক্ষণের প্রশংসা করে এক অভিনন্দন বার্তা পাঠান এবং ফুল ও কার্ড দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। বিরোধী দলের এক নেতাকে এমনভাবে স্বীকৃতি দেওয়া রাজনৈতিক সৌজন্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
“এটা অস্বাভাবিক নয়” — সুকান্ত মজুমদার
বিয়ে নিয়ে যে সমালোচনার ঝড় উঠেছে, তা নিয়ে স্পষ্ট বক্তব্য দেন সুকান্ত মজুমদার। তিনি বলেন,
“দিলীপদা বহু বছর ধরে আরএসএস-এর প্রচারক ছিলেন। সেই সময় সংসার জীবনের থেকে দেশের কাজকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। মায়ের ইচ্ছায়, এই বয়সে তিনি বিয়ে করলেন— এতে কোনো অস্বাভাবিকতা নেই।”
তিনি আরও উদাহরণ টেনে বলেন,
“লাল কৃষ্ণ আডবানি থেকে শুরু করে প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সী ও ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত— অনেক বর্ষীয়ান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব পরিণত বয়সে বিয়ে করেছেন। কেউ কেউ তো ধর্ম পরিবর্তন করেও সংসার জীবন বেছে নিয়েছেন।”
সমালোচনার মাঝে ভালোবাসার বার্তা
যদিও সমাজের একাংশ এই বিয়ে নিয়ে নানান মন্তব্য করছেন, তবে দিলীপ ঘোষ ও রিঙ্কু মজুমদারের এই সিদ্ধান্তকে এক ‘ব্যক্তিগত সাহসী পদক্ষেপ’ বলেই মানছেন বিশিষ্টজনেরা। ব্যক্তিগত জীবনে দেরিতে হলেও স্থিতি খুঁজে পাওয়া যে কখনোই দোষের নয়, সেই বার্তাই যেন দিলীপ ঘোষের এই সিদ্ধান্তে উঠে এল।
বিবাহিত জীবনের নতুন অধ্যায়ে পা রাখা এই নবদম্পতিকে রাজ্যবাসী ও রাজনৈতিক সহযোদ্ধারা জানিয়েছেন অফুরন্ত শুভেচ্ছা ও ভালবাসা।