সৈকত দাস, বালি (৩ জুন ২০২৫):–
সম্প্রতি বালি ও বালি হল্ট সংলগ্ন রেলওয়ে জমিতে দেখা গিয়েছে একটি বিতর্কিত নোটিশ, যা ঘিরে উত্তাল হয়ে উঠেছে গোটা এলাকা। ওই নোটিশে বলা হয়েছে, আগামী ৪ জুন ২০২৫ তারিখের মধ্যে রেলওয়ের অনুমোদিত দখলদারদের নিজেদের অবস্থান খালি করতে হবে, অন্যথায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে উচ্ছেদের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে এই নোটিশে না আছে কোনো মেমো নম্বর, না আছে কোনো স্বাক্ষর। ফলে এর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ব্যবসায়ীরা। তারা একে “অনৈতিক ও অমানবিক” আখ্যা দিয়ে স্পষ্ট জানিয়েছেন—এই নোটিশ তারা মানেন না।
এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার (৩ জুন) ডোমজুড় তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র পক্ষ থেকে এক বিশাল প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করা হয়। মিছিলে নেতৃত্ব দেন সংগঠনের একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতা—সোনালী সমাদ্দার (ডোমজুড় তৃণমূল মহিলা মোর্চার সহ-সভাপতি), মলয় সরকার (আইএনটিটিইউসি ডোমজুড় কেন্দ্রের সভাপতি), সুজয় সাহা (বালি হল্ট আইএনটিটিইউসি সেক্রেটারি), সঞ্জয় চক্রবর্তী (সহ-সভাপতি), রঞ্জিত ঘোরুই (সহ-সম্পাদক) ও সাখি দাস (বালি অঞ্চলের নেত্রী)।
এই প্রসঙ্গে মলয় সরকার জানান, “সরকারি নোটিশে যথাযথ মেমো নম্বর ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষর থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু এখানে তা নেই। আমরা ইতিমধ্যেই রেলওয়ের বিভিন্ন দপ্তর, আরপিএফ, পঞ্চায়েত, থানা, বিধায়কের অফিস, এমনকি রেল বোর্ড ও ডি.আর.এম-এর কাছে চিঠি দিয়েছি। জেলা শাসক এবং পুলিশ কমিশনার নিজে বিষয়টি দেখছেন। আমাদের বিধায়ক এবং সাংসদ দিল্লিতে রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।”
তিনি আরও বলেন, “এই ব্যবসায়ীরা দীর্ঘ ৩০-৪০ বছর ধরে এই এলাকায় ব্যবসা করে আসছেন। তারা শুধু অর্থনৈতিকভাবে নয়, সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত আলো জ্বলতে থাকার কারণে এই এলাকায় ছিনতাই, চুরি, অপরাধমূলক কাজ প্রায় নেই বললেই চলে। এরা নিজেরাই এলাকাকে নিরাপত্তা দেয়। তাই আমাদের দাবি, উন্নয়নের নামে যাদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে, তাদের যথাযথ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হোক।”
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “অমৃত ভারত প্রকল্পের নামে যে রেল কোয়ার্টারগুলি খালি করা হয়েছে, সেগুলি আজও পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে, যা চোর-ডাকাতদের আস্তানায় পরিণত হয়েছে। অথচ এলাকাবাসীর বহু পুরোনো দাবি—বালি স্টেশনে যানজট কমাতে দ্বিতীয় সাবওয়ে তৈরি—সেটা আজও অধরা।”
এদিকে এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ ও প্রতিবাদকে ঘিরে প্রশাসনিক মহলেও তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। এখন দেখার, ৪ জুনের আগে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেয় কিনা, এবং এই ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের বিষয়ে কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় কিনা।