সৈকত দাস, কলকাতা:
মানসিক সুস্থতা ও আবেগীয় সুস্থতার ওপর আলোকপাত করতে সম্প্রতি কলকাতায় অনুষ্ঠিত হল এক ব্যতিক্রমী ও মননশীল অনুষ্ঠান—‘The Common Thread – Together for Tomorrow’s Wellness’। আয়োজন করেছিল ‘অন্নন্তা – পাওয়ার অব দ্য মাইন্ড’ (Annantaa – Power of the Mind), যা মানসিক সুস্থতাকে সহজলভ্য, প্রাসঙ্গিক এবং ক্ষমতায়নকারী করে তুলতে কাজ করে চলেছে।
অন্নন্তার প্রতিষ্ঠাতা মধুরি সারদা এবং সহ-প্রতিষ্ঠাতা িধি বানসাল—দুই মননশীল ও সহানুভূতিশীল মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ—এই উদ্যোগের মূল চালিকাশক্তি। মধুরি, একজন মনোবিজ্ঞানী এবং ‘বিলিফ সিস্টেম এনহান্সার’ হিসেবে পরিচিত, যিনি মানুষের মনের গভীরে থাকা সীমাবদ্ধ বিশ্বাস এবং অভিজ্ঞতাকে পুনর্লিখন করে ইতিবাচক জীবনের পথে চালিত করেন। অন্যদিকে, িধি একজন দক্ষ সাইকোথেরাপিস্ট যিনি ক্লায়েন্ট-কেন্দ্রিক পদ্ধতিতে মানসিক স্বচ্ছতা ও আবেগীয় স্থিতিশীলতা গঠনে পারদর্শী।
‘দ্য কমন থ্রেড’ – একটি সহানুভূতিপূর্ণ যাত্রা
অনুষ্ঠানে একাধিক বিশেষজ্ঞ-নেতৃত্বাধীন আলোচনা ও নিরাময়মূলক সেশন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে অংশগ্রহণকারীরা নিজেদের শৈশবের অভিজ্ঞতা ও মনের গঠনের ওপর তার প্রভাব নিয়ে অন্তর্দৃষ্টি অর্জন করেন। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছিল ইকা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও ডিরেক্টর ইউবরাজ কাপাডিয়া-র অভিজ্ঞতালব্ধ সেশন, যা অংশগ্রহণকারীদের গভীর আবেগীয় উপলব্ধি ও আত্মসচেতনতার দিকে পরিচালিত করে।
ইউবরাজ কাপাডিয়া বলেন, “যেদিন আমরা বুঝতে পারব যে মন একটি অদৃশ্য দেহ এবং দেহ একটি দৃশ্যমান মন, সেদিনই আমরা মানুষের আসল মহিমাকে উপলব্ধি করতে পারব।” তিনি আরও যোগ করেন, “মানবিক সম্ভাবনাকে সম্পূর্ণভাবে উদ্ভাসিত করতে হলে, মনের সফটওয়্যার ও মস্তিষ্কের হার্ডওয়্যারের মধ্যে সঠিক সমন্বয় অত্যাবশ্যক।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও লেখিকা দিব্যা দত্ত, যিনি নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা, মানসিক স্থিতি ও লড়াইয়ের কথা অকপটে শেয়ার করে দর্শকদের মন জয় করেন। তাঁর বক্তব্য সকলকে অনুপ্রাণিত করে এবং বোঝায় যে আবেগীয় দৃঢ়তা কিভাবে জীবনের বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়ক হতে পারে।
সম্মেলনের অভিপ্রায় ও প্রাসঙ্গিকতা
এটি ছিল একটি গভীর, সহানুভূতিশীল এবং থেরাপিউটিক অভিজ্ঞতা, যেখানে মনোবিদ, শিক্ষাবিদ ও হিলিং আর্টের প্রতিনিধিরা একত্রিত হয়ে একটি নিরাপদ ও গভীর আত্মচিন্তার পরিসর তৈরি করেন। সমসাময়িক দ্রুতগামী জীবনে মানসিক সংযোগ, আবেগীয় সচেতনতা এবং কমিউনিটি-ভিত্তিক সহানুভূতির যে প্রয়োজন, তা এই অনুষ্ঠানে সুস্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে।
অন্নন্তা তাদের কাজের মাধ্যমে স্কুল, কলেজ, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে নিয়মিতভাবে মানসিক স্বাস্থ্যকে সাধারণ মানুষের নাগালে আনার জন্য কাজ করছে। সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠাতা িধি বানসাল বলেন, “আমার লক্ষ্য মানুষকে সেই জায়গাটায় পৌঁছে দেওয়া, যেখানে তারা নিজেকে অনুভব করতে পারে, শোনা ও বোঝা যায়—এভাবেই প্রকৃত নিরাময় সম্ভব।”
অন্নন্তার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, “এই অনুষ্ঠান আমাদের মূল দর্শনকে প্রতিফলিত করে—মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে নীরবতা ভাঙা এবং এক সহানুভূতিপূর্ণ ও সচেতন কমিউনিটি গঠন করা। আমরা গর্বিত যে এমন একটি পরিসর দিতে পেরেছি, যেখানে নিরাময়মূলক আলোচনা ও আত্মসমঝোতার স্থান তৈরি হয়েছে।”
ভবিষ্যতের লক্ষ্য
সংস্থাটি ভবিষ্যতে তাদের কার্যক্রমকে আরও বিস্তৃত করার লক্ষ্যে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, আউটরিচ প্রোগ্রাম এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানিক সহযোগিতার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছাতে চায়।