নিজস্ব প্রতিনিধি, উত্তরপাড়া: – “বাবা শত্রু দেশে বন্দী,সেখানে কি করছে,কেমন আছে”, ছেলের প্রশ্নে কোনো উত্তর দিতে পারছেন না। সেই উত্তর খু্ঁজতে পাঠানকোট যাচ্ছেন বিএসএফ জওয়ানের স্ত্রী রজনী।
ছয় দিন ধরে স্বামী শত্রু দেশে বন্দী আমি স্ত্রী হিসেবে কি করে স্থির থাকতে পারি, তাই পাঠানকোটে রওনা দিচ্ছে। কলকাতা বিমানবন্দরে যাওয়ার আগে বললেন বিএসএফ জওয়ান পূর্ণম কুমারের স্ত্রী রজনী।
রজনী আরো বলেন, সরকারি তরফে দেশের স্বরাষ্ট্র দপ্তর বা বিএসএফ আমার স্বামীর বিষয়ে কোন খবর দিতে পারেনি। শুধু এটুকুই জেনেছি সে পাকিস্তানে বন্দি হয়ে রয়েছে। যে ১৭ বছর ধরে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সে কাজ করল সে বর্ডার চিনবে না? আমার আশঙ্কা তাকে অপহরণ করা হয়েছে। এখন তাকে ছাড়ানোর বিষয়ে সরকারি উদ্যোগ আমি সেভাবে দেখতে পাইনি।
বিএসএফের একটি দল গতকাল পূর্ণমের বাড়িতে এসেছিল ঠিকই কিন্তু যে আশ্বস্ত করে তারা গেছে তাতে খুব একটা খুশি হতে পারেননি তারা। আজ রজনী, তার আট বছরের ছেলে আরব, তার বোন পিংকি গুপ্তা, পূজা গুপ্তা ও ভাই সত্যপ্রকাশ গুপ্তা এই পাঁচজন মিলে দুপুর একটা তিরিশ মিনিট নাগাদ কলকাতা থেকে বিমানে চন্ডিগড় যাবেন।সেখান থেকে তারা সড়কপথে পৌঁছবেন পাঠানকোট। সেখানে ২৪ নম্বর ব্যাটেলিয়ানের অফিসারদের সঙ্গে কথা বলবেন।কি অবস্থায় আছে ,কেমন আছে সেটা জানতে তারা উদগ্রীব। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ঝুঁকি নিয়ে পাঠানকোর্ট যাচ্ছেন বিএসএফ জওয়ানের স্ত্রী।
সংবাদ মাধ্যমের সামনে রজনী বলেন, “আমি সিও স্যারের সাথে কথা বলবো। যদি কোন রেসপন্স না পাই তাহলে দিল্লির দরজায় কড়া নাড়বো। ওনারা খালি বলছেন ও ঠিক আছে। কিন্তু ওতো ইন্ডিয়াতে নেই ,শত্রু দেশে রয়েছে । তাহলে আমি কি করে চিন্তা না করে থাকবো। আমি মানছি আমার স্বামীর জন্য গোটা দেশ ভাবছে। কিন্তু কোন কিছুই জানতে পারছি না। যে কারণে এই অবস্থাতেও আমাকে বাড়ি থেকে বের হতে হচ্ছে। আমি কোন খবর পাচ্ছি না, যদি এটুকুও জানতে পারতাম উনি ঠিক আছেন তাহলে এই কন্ডিশনে আমি যেতাম না। তাহলে এই পরিস্থিতিতে আমি যেতাম না। আমাকে বিমানে যেতে দেবে কিনা তাও জানিনা। আমি যেটুকু জানতে পেরেছি কেন্দ্রে খবর যায়নি। ছয় দিন ধরে কি হচ্ছে। অনেকেই আসছে অনেকেই বলছে কিন্তু কাজের কাজ কি হচ্ছে? স্বামী ভালো আছে সুস্থ আছে সেটা কেউ বলছে না। কাশ্মীরে ঘটনার জন্য তা নিয়েই সবাই ব্যস্ত রয়েছেন। কিন্তু সেই সমস্যা যদি ১ বছর চলে, তাহলে আমার স্বামী কি এক বছর ধরে সেখানে আটকে থাকবে? কি কারণে ধরে রেখেছে সেটাও তো জানাবে। একটা বিএসএফের জওয়ান ১৭ বছর চাকরি করছে তার সীমানা সে জানে না। ওরা বলছে বর্ডার পার করেছিল। ও ১৭ বছর চাকরি করছে ও কি করে বর্ডার পার করলো সীমানা জানে না। আসল খবরটাই আমাকে জানানো হয়নি। ওর বন্ধুরা আমাকে জানিয়েছিল, ওর অফিস থেকে কোন খবর দেওয়া হয়নি। ও যখন আটক হল তখন কেউ জানালো না। যদি আমার স্বামীর কিছু হয়ে যায় তাহলে কাকে ধরবো? আমার মনে হচ্ছে কিছু একটা গোপন করা হচ্ছে? ওখানে গিয়ে সেটা জানতে পারবো? আমার বাচ্চা যখন আমাকে জিজ্ঞেস করে বাবা কোথায় আছে কেমন আছে, তাকে কোন উত্তর দিতে পারি না । যে রোজ ভিডিও কলে কথা বলতো, সে গত ছ’দিন ধরে কোন কথা বলতে পারছে না। আমি রাতে ঘুমাই কি না , খাচ্ছি কি না এগুলো কেউ জিজ্ঞেস করে না? “শুধু বলছে আ জায়ে গা আ জায়ে গা”। আমি কাকে বিশ্বাস করব আজ সাত দিন হতে চলল।”
সোমবার সকালে বিজেপির তিন বিধায়ক পুড়শুড়া বিমান ঘোষ, কল্যাণীর অম্বিকা রায়, ভাটপাড়ার পবন সিং আসেন রিষড়া হরিসভার পুণম সাউয়ের বাড়িতে। সেখানে তারা জওনের বাবা স্ত্রী সঙ্গে কথা বলেন। পরে পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেসের অবসারভার আম্বা প্রসাদ তিনি ও তার বাড়িতে আসেন।