কলকাতাদেশরাজ্যশিক্ষা

দীর্ঘ ৯ বছর পর রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা, আশায় বুক বেঁধেছেন লক্ষাধিক প্রার্থী

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা, রবিবার:

অপেক্ষার অবসান। আইনি জট, আন্দোলন, রাজনৈতিক টানাপোড়েন পেরিয়ে অবশেষে রাজ্যে অনুষ্ঠিত হলো বহুল আলোচিত শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা। প্রায় নয় বছর পর রাজ্যজুড়ে স্কুল সার্ভিস কমিশনের (SSC) নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ায় আজ রাজ্যের প্রতিটি জেলায় ছিল উৎসবের আমেজ। সকাল থেকেই পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন পরীক্ষার্থীরা। ভিড় সামলাতে বেগ পেতে হয় পুলিশকেও।

আজকের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন ৩ লক্ষ ১৯ হাজারেরও বেশি প্রার্থী। পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশ, বিহারের মতো বিজেপি শাসিত রাজ্য থেকেও বহু পরীক্ষার্থী এসেছেন। বহুজন রাতেই ট্রেনে বা বাসে এসে পৌঁছেছেন পরীক্ষাকেন্দ্রের জেলায়। তাদের মধ্যে কেউ প্রথমবার, কেউ আবার শেষবারের মতো সুযোগ পাচ্ছেন চাকরির লড়াইয়ে বসতে।

শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, প্রতিবেশী রাজ্য থেকেও বহু পরীক্ষার্থী এই পরীক্ষায় অংশ নিতে এসেছেন। বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের মতো বিজেপি শাসিত রাজ্য থেকেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রার্থী পরীক্ষা দিচ্ছেন। রাজ্যে শিক্ষকতার চাকরির প্রতি বাড়তি আকর্ষণ তৈরি হওয়ায় ভিনরাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়েছে।

উত্তরবঙ্গের কোচবিহার জেলায় মোট ৩০টি কেন্দ্রে প্রায় ১৩ হাজার পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছেন। ভোর থেকেই জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে পরীক্ষার্থীরা আসতে শুরু করেন। বহু মানুষকে পরীক্ষা কেন্দ্রের আশেপাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। অনেকে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে এসেছেন। প্রশাসনের তরফে প্রতিটি কেন্দ্রে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য আলাদা নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

কড়া নিরাপত্তা ও প্রসাশনিক ব্যবস্থা:-

পরীক্ষা যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়, সেজন্য প্রতিটি পরীক্ষাকেন্দ্রে কড়া নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। পরীক্ষাকেন্দ্রের ভেতরে ও বাইরে পুলিশ মোতায়েন ছিল। প্রবেশপথে পরীক্ষার্থীদের পরিচয়পত্র ও অ্যাডমিট কার্ড কঠোরভাবে পরীক্ষা করা হয়। আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে নকল প্রতিরোধেও বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষার সময় কোনো অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা ছিল আটো সাটো। প্রতিটি কেন্দ্রে মোতায়েন ছিল মহিলা ও পুরুষ পুলিশবাহিনী। ভেতরে-বাইরে স্থাপন করা হয়েছিল সিসি ক্যামেরা। পরিচয় যাচাই, প্রবেশপত্র খুঁটিয়ে দেখা, মোবাইল ও ইলেকট্রনিক যন্ত্র নিষিদ্ধ করা—সব মিলিয়ে নকল ঠেকাতে নেওয়া হয়েছিল আসনের পক্ষ থেকে বিশেষ ব্যবস্থা। অনেক কেন্দ্রে পরীক্ষার শুরু হওয়ার অন্তত দেড় ঘণ্টা আগে থেকেই পরীক্ষার্থীদের ঢুকতে দেওয়া হয়।

দীর্ঘদিনের বিতর্কের অবসান:-

গত কয়েক বছর ধরে রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক, আন্দোলন ও মামলার জটাজটিতে বারবার নিয়োগ প্রক্রিয়া থমকে গিয়েছিল। যোগ্য প্রার্থীরা চাকরির দাবিতে বারবার পথে নেমেছিলেন। অবশেষে প্রায় এক দশক পর পরীক্ষা হওয়ার ফলে প্রার্থীদের মধ্যে স্বস্তি ও উচ্ছ্বাস দুই-ই লক্ষ্য করা গেছে। অনেক পরীক্ষার্থী জানিয়েছেন, “এই দিনটির জন্য অনেক বছর অপেক্ষা করেছি। এবার আশা করি ন্যায্যতার ভিত্তিতে চাকরি পাব।”

আজকের পরীক্ষার দিন তাই তাদের কাছে এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত।

এক অভিভাবকের আবেগঘন বক্তব্য, “আমার ছেলে গত সাত বছর ধরে চেষ্টা করছে। পরিবারে আর্থিক সঙ্কট। আজকের পরীক্ষা যেন তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।”

শিক্ষাবিদদের মতে, বহু স্কুলেই দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকশূন্যতার সমস্যা দেখা দিয়েছে। এই নিয়োগ সম্পন্ন হলে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার মান উন্নত হবে। একজন শিক্ষা বিশেষজ্ঞ বলেন, “এই নিয়োগ শুধুই চাকরি নয়, এটা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গড়ে তোলার লড়াই।”

পরবর্তী ধাপ

লিখিত পরীক্ষার ভিত্তিতে মেধাতালিকা তৈরি করে যোগ্য প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে। এরপর চূড়ান্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। রাজ্যের শিক্ষাজগতে তাই এই পরীক্ষাকে ঘিরে প্রবল আশাবাদ।

Khabarer Sandhane is a news hub which provides you with comprehensive up-to-date Bengali news coverage from all over West Bengal and India. Get the latest Bengali top stories, Bengali Breaking Stories, Bengali live news ,current affairs news in Bengali,…

Related Posts

Leave A Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *